"মা, এখন বেশি কথা বলতে পারবোনা। গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। আমার জন্য দোয়া করবা।" গত শনিবার বিকেল ৩টায় মুঠোফোনে মায়ের সঙ্গে সর্বশেষ এতটুকুই কথা হয় মালিতে বিদ্রোহী সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা মাইনের বিস্ফোরণে নিহত ল্যান্স কর্পোরাল জাকিরুলের। তার মা জ্যোৎস্না বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, আমি কখনই ভাবিনি, ছেলের সঙ্গে এটিই হবে আমার শেষ কথা।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে বোমা বিস্ফোরণে নিহত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে কর্মরত নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া গ্রামের জাকিরুল আলম সোহাগের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ সোমবার দুপুরে জাকিরুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা জ্যোৎস্না বেগম কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
তিনি আহাজারি করতে করতে বলেন, ছেলেটা প্রায়ই মৃত্যুর কথা বলতো। সে বলতো, মা আমি হয়ত বাঁচব না। তোমরা ভালো থেকো। বাবাকে নিয়মিত ডাক্তার দেখাবে। তুমিও শরীরের প্রতি যত্ন নিও। আর যদি বেঁচে থাকি, তাহলে আর সাত মাস পরই তো চলে আসব। দেশে এসে বাবাকে ভালো ডাক্তার দেখাব। সকল আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাব। অনেক মজা করবো। এখন কোথায় আমার জাকিরুল?
তিনি জানান, জাকিরুলের বাবা অসুস্থ থাকায় তাকেই ছেলে-মেয়ে ও সংসারের দায়িত্ব বহন করতে হয়েছে। অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করিয়েছেন। জাকিরুলই ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল। এখন এই সংসার কিভাবে চলবে ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।
জাকিরুলের স্ত্রী উচ্চমাধ্যমিক পাশ। তাই জাকিরুলের ছেলে দুটির পড়ালেখা ও স্ত্রীর একটি চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য সরকার এবং সেনাবাহিনীর প্রতি দাবি জানান তিনি।
যখন এ প্রতিবেদক জাকিরুলের বাসায় যান তখন তার স্ত্রী মার্জিয়া তামান্না দুই ছেলে শিশুকে জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারায় কাঁদছিলেন। তিনি বলেন, দুই ছেলেকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। ফোন করে বলতো, দেশে এসে শহরে বাসা ভাড়া নিবো। দুই ছেলেকে ক্যান্টনম্যান্ট স্কুলে ভর্তি করাবো।
তিনি আরও বলেন, মিশনে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না তার। মিশনে যাওয়ার চিঠি পেয়ে তার মন খারাপ হয়ে যায়। তখনও সে যেতে চায়নি। কিন্তু চাকরির প্রয়োজনে ইচ্ছার বিরুদ্ধেই সে মিশনে যায়। সেখানে যাওয়ার পর ফোনে কথা হলেই সে মরে যাবে এমনটি বলতো। আর বলতো, বেঁচে থাকলে দেশে এসে তার মা ও আমার জন্য স্বর্ণের অলংকার বানাবে। আর এখন এসবই স্বপ্নে পরিণত হলো।
জাকিরুলরা তিন ভাই ও দুই বোন। সে সবার ছোট। এন জারিয়া ঝাঞ্জাইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ২০০১ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন জাকিরুল। তার বাবা সফির উদ্দিন সরকার প্রায় ২০ বছর ধরে অসুস্থ। দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। অন্য দুই ভাইয়ের স্থায়ী কোনো চাকরি নেই। তাই সবাই স্বপ্ন দেখতো জাকিরুলকে নিয়ে। সাত বছর আগে বিয়ে করেন জাকিরুল। তাদের তাসদিক (৬) ও তারিছ (৪) নামের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
"মা, এখন বেশি কথা বলতে পারবোনা"
Reviewed by BD News
on
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
Rating:
Reviewed by BD News
on
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
Rating:

কোন মন্তব্য নেই: