সাড়ে ৯ টন চাল গেল কোথায়?



প্রতি বস্তায় চাল থাকার কথা ৩০ কেজি। বাস্তবে কোনো বস্তায় চাল পাওয়া গেল ১২, ১৪ কিংবা ২০ কেজি। এভাবে মোট ৩০ টন চালের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৯ টন চালের ঘাটতি পাওয়া গেছে কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামের (সিএসডি গোডাউন) একটি চালানে। চালানটি ঢাকা-৪ আসনের সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেনের নির্বাচনী এলাকার পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
বুধবার দুপুরে র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র?্যাব-২-এর সদস্যরা কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামে অভিযান চালান। মঙ্গলবার রাতে যখন চালের ট্রাকটি খাদ্যগুদাম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখনই ট্রাকটি আটক করে র?্যাব।
গতকাল দুপুরে তেজগাঁও খাদ্যগুদামে সরেজমিন দেখা যায়, অন্তত পাঁচটি গাড়িতে করে র?্যাবের সদস্যরা গুদামে প্রবেশ করেন। এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গুদামের ব্যবস্থাপকের কক্ষে গিয়ে বিভিন্ন নথি পরীক্ষা করেন। নথিতে গরমিল পাওয়ার পর গুদামে গিয়ে চালের বস্তা বের করে সেটি মাপার ব্যবস্থা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। চালের বস্তাগুলো মাপার সময় প্রতিটি বস্তায় অসংগতি দেখা যায়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম বলেন, মঙ্গলবার রাতে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র?্যাব সদস্যদের নিয়ে গুদামের সামনে চালের ট্রাক আটক করা হয়। বুধবার ট্রাক থেকে চালের বস্তা নামিয়ে ওজনে অনেক বেশি হেরফের পাওয়া যায়। এই অনিয়মে গুদামের বিভিন্নপর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত। তিনি বলেন, একটি ট্রাক মালামাল নিয়ে বিকেল ৫টার পর গুদাম ত্যাগ করতে পারে না। অথচ মঙ্গলবার রাত ৮টায় গুদাম থেকে চালের ট্রাক ছাড় করা হয়েছে, এটি অনিয়ম।

সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেনের বিশেষ সহকারী মো. হায়দার আলী বলেন, চালের চালান নিতে তিনি মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় খাদ্যগুদামে যান। এরপর সারা দিনে তিনি চাল পাননি। অবশেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চাল নেয়ার জন্য তাকে গুদাম থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। এরপর তিনি রাত ৮টার দিকে চাল নিয়ে খাদ্যগুদাম ত্যাগ করতে গেলে র?্যাবের সদস্যরা তার ট্রাকটি আটক করেন। এরপর তারা চালের পরিমাণে ঘাটতির বিষয়টি দেখতে পান।

মো. হায়দার আলী অভিযোগ করেন, গুদামে দুটি ওজন মাপা মেশিন (স্কেল) আছে। একটি আধুনিক এবং অপরটি পুরনো ও নষ্ট। তাকে চাল দেয়ার সময় পুরনোটায় চাল মেপে দেয়া হয়। তিনি এই মেশিনে ওজন না মাপার জন্য বললেও খাদ্যগুদামের লোকজন বিষয়টি আমলে নেননি।

এ বিষয়ে তেজগাঁও সিএসডি গোডাউনের ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির বলেন, পুরনো স্কেলে চাল মাপার কথা না। এটি অনেক দিন ধরে ব্যবহার করা হয় না। এরপরও এটিতে মাপা হলে, এটি বন্ধ করে দেয়া হবে। চালের হিসাবে হেরফেরের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

এদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম বলেছেন, 'চালের বস্তাগুলো পরিমাপ করা হয়েছে। এগুলো নমুনা হিসেবে আটক করা হবে। বিষয়টি গুছিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়া হবে।' তিনি বলেন, এখানে মঙ্গলবার আনসার ভিডিপি ও সিভিল ডিফেন্সকে ৭৫ টন চাল দেয়া হয়েছে। কিন্তু গুদামের কাগজে দেখানো হয়েছে ২৫৮ টন চাল দেয়া হয়েছে। এই হিসাবে ১৮৩ টন চালের হিসাব ভুয়া। বিষয়টিও নথি আকারে দুদকের কাছে পাঠানো হবে।

চাল কমের বিষয়ে ঢাকা-৪ আসনের সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন বলেন, 'দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আমি এই চাল পেয়েছি। গতবারও পানিবন্দি মানুষের মাঝে চাল বিতরণ করেছি। কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম সবার চালেই কম দেয়। এখানে একটি বড় চক্র জড়িত আছে। এই চক্রকে শনাক্ত করে, এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।'
সাড়ে ৯ টন চাল গেল কোথায়? সাড়ে ৯ টন চাল গেল কোথায়? Reviewed by BD News on সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৭ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Social

Blogger দ্বারা পরিচালিত.